৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ লাপাত্তা এনজিও পরিচালক

ডেস্ক রিপোর্ট •

জয়পুরহাটে ৫২০ জন গ্রাহকের প্রায় ৯ কোটি টাকা নিয়ে রাতের আঁধারে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়েছেন এক এনজিওর নির্বাহী পরিচালক।

অভিযুক্ত আহাদ সরদার সবুজ ওরফে সবুজ সরদার জয়পুরহাট শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার দুলু সরদারের ছেলে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম বিনিময় আদর্শ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড।

এ অবস্থায় অধিক মুনাফা পাওয়ার আশায় এ সমবায় সমিতিতে সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখা অধিকাংশ আমানতকারীর এখন মাথায় হাত। এ সমিতিতে তাদের সঞ্চয় রাখা বিপুল অংকের টাকার মুনাফা দূরের কথা, এখন মূল সঞ্চয় ফেরত পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

গ্রাহকরা ছুটে যাচ্ছেন বিনিময় আদর্শ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অফিস আর সমিতির মালিক সবুজ সরদারের বাড়িতে। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ নেই। নিজেদের জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ওই সমবায় সমিতির সামনে মিছিলও করেছেন তারা।

জানা গেছে, প্রায় ৯ বছর আগে ২০১১ সালে ১৮ আগস্ট জেলার জয়পুরহাট সদর উপজেলা সমবায় সমিতির ৪১৯ নম্বর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে মাস্টারপাড়ায় বিনিময় আদর্শ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নামে অফিস খোলেন সবুজ সরদার। সেখানেই চলছিল তাদের কার্যক্রম।

এক লাখ টাকার সঞ্চয় জমা রেখে প্রতি মাসে প্রথম দিকে তিন হাজার টাকা মুনাফা দেয়া শুরু করে সমিতিটি। পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর প্রতি এক লাখ টাকায় দুই হাজার ৬শ’ টাকা হারে মুনাফা দেয়া হয়।

এ সংকট সময়েও এমন আকর্ষণীয় মুনাফার অফারে বাড়তে থাকে এ সমিতির গ্রাহক সংখ্যা। আর এ লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহকরা তাদের জীবনের শেষ সম্বল-সঞ্চিত লাখ লাখ টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখেন এ সমিতিতে।

লোভনীয় মুনাফার ফাঁদে পা দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁর আব্দুর রাজ্জাক (তৎকালীন জয়পুরহাট এলজিইডি কর্মকর্তা) নিজের, স্ত্রী ও এক সন্তানের নামে ১৫ লাখ টাকা করে মোট ৪৫ লাখ টাকা জমা রাখেন। বর্তমানে তার মুনাফাসহ মোট পাওনা ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের বিপুল দাস জানান, ১২ লাখ টাকা বিনিময় এনজিওতে সঞ্চয় জমা রেখেছেন।

পৌর এলাকার দেবীপুর মহল্লার শাহেদ মাহমুদ জানান, তিনি সাড়ে ৮ লাখ টাকা সেখানে জমা রেখেছেন।

নাজমুল হক নামে এক ব্যক্তি এ সমিতিতি জমা রেখেছেন ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫০ টাকা। এমনকি এ সমবায় সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে থাকা পুজা রানীরও প্রায় ৩ লাখ টাকা জমা রয়েছে এ সমিতিতে। এছাড়া তার নিকটতম তিন আত্মীয়েরও প্রায় ২ লাখ টাকা জমা রয়েছে।

এ ব্যাপারে সমবায় সমিতির ম্যানেজার পুজা রানী জানান, এ সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৪১৯ ও সংশোধিত রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬০৯। তাদের মূল অফিস জয়পুরহাট শহরের মাস্টারপাড়া মহল্লায়। এছাড়া জেলার পাঁচবিবি উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় এ সমিতির দুটি শাখা রয়েছে।

২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর অফিসের কাউকে কোনো কিছু না বলে গভীর রাতে এ সমিতির মালিক নির্বাহী পরিচালক সবুজ সরদার নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রাহকদের জমা রাখা প্রায় ৯ কোটি টাকার আমানতসহ পালিয়ে গেছেন।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুলতান আলম জানান, অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সমবায় সমিতির কার্যক্রম ও এর নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত করা হয়। ওই তদন্তে এ সমিতির ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এ তদন্তের রিপোর্ট জেলা সমবায় অফিসে পাঠানো হয়। এরপর এ সমিতির নির্বাহী পরিচালক সবুজ সরদারকে শোকজ করে জেলা সমবায় অফিস।

এ শোকজের এক সপ্তাহের মাথায় তার সমিতির অফিস আকস্মিক বন্ধ করে দিয়ে নির্বাহী পরিচালক সবুজ সরদার জয়পুরহাট ছেড়ে পালিয়ে যান।